ব্যক্তিত্বের সাথে পোশাকের সম্পর্ক (পাঠ ২)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গার্হস্থ্যবিজ্ঞান - বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন তন্তু | NCTB BOOK
385

ব্যক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বা আচরণই হচ্ছে তার ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিত্বের সাথে পোশাকের একটি সুনিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সুন্দর পোশাক রুচিশীল মনের পরিচয় দেয় এবং ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। কাজেই দেখা যায় যে, পোশাক ও ব্যক্তিত্ব এ দুটি একে অন্যের পরিপূরক। তবে এক্ষেত্রে জানতে হবে যে কোন পোশাক কার জন্য কতটুকু উপযুক্ত? আর এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে সবার আগে আমাদের নিজেকে জানতে হবে। অর্থাৎ আমার নিজের গায়ের রং, উচ্চতা, ওজন, দেহের গঠন, বয়স, মুখের আকৃতি ইত্যাদির দিকে লক্ষ রেখে পোশাক নির্বাচন ও পরিধান করতে হবে। এছাড়া যেসব বিষয়ের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, সেগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

১. পোশাকের ছাপা- বড় ও ছোট ছাপা ব্যক্তিত্বের ওপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। বড় বড় ছাপার নকশাবহুল পোশাকে স্থুলকায় ব্যক্তিকে আরও স্থুলকার দেখায়। তাই খর্বাকৃতি ও স্থুলকায়দের জন্য ছোট ছোট ছাপার পোশাক উপযোগী।

২. পোশাকের রং পোশাকের জন্য উপযুক্ত রং নির্বাচন করেও আমরা দেহের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারব। পোশাকের রং দেহের সাথে মানানসই না হলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব অনেকখানি ম্লান হয়ে যায়। দেহের ত্বক, চুল ও চোখের রঙের সাথে মিল রেখে পোশাকের রং নির্বাচন করা উচিত। যাদের দেহের রঙ উজ্জ্বল তারা যেকোনো রঙের পোশাকই নির্বাচন করতে পারে, তবে শ্যামলা রঙের ব্যক্তিদের হালকা রঙের পোশাকে ভালো দেখায়। লাল, হলুদ, কমলা রংগুলো গাঢ় ও উজ্জ্বল হওয়ায় দূর থেকে এদের চোখে পড়ে। যেহেতু এই উষ্ণ রংগুলোর তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি, তাই গরমকালে এ ধরনের রঙের পোশাকে আরও গরম অনুভূত হয়। এই রঙের পোশাকে পাতলা গড়নের ব্যক্তিকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী বলে মনে হয়।

অন্যদিকে নীল, সবুজ, নীলাভ সবুজ ইত্যাদি রং হালকা ও স্নিগ্ধ হওয়ায় এদের ঠান্ডা মনে হয়। তাই গরম কালে এ রঙের পোশাক নির্বাচন করা যেতে পারে।
৩. লম্বা এবং আড়াআড়ি রেখার পোশাক- চেক ও স্ট্রাইপ কাপড় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ লম্বা বা খাড়া রেখার পোশাক ব্যক্তির দেহ কাঠামোকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে বড় করে তোলে। অন্যদিকে আড়াআড়ি রেখার পোশাকে অতিরিক্ত লম্বা ব্যক্তির দেহ কাঠামোকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে ছোট দেখায়।

পোশাকে আড়াআড়ি ও খাড়া রেখার প্রভাব

৪. পোশাকের আকার পোশাকের আকারের তারতম্য করেও দেহাকৃতির ওপর প্রভাব ফেলা যায়। পাতলা গড়নের ব্যক্তির জন্য ঢিলেঢালা, ফুল হাতা, ছোট গলার পোশাক বিশেষ উপযোগী। আবার বড় গলা, ছোট হাতার আঁটোসাঁটো পোশাকে স্থূলকায় ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী মনে হবে।
৫. পোশাকের পরিচ্ছন্নতা- ব্যক্তিত্ব বিকাশে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরিচ্ছদের সাথে সাথে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আগেই জেনেছি যে নোংরা হলে দামি পোশাকও বিরক্তির সৃষ্টি করে। এ অবস্থা মানুষের ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে না।
৬. সমাজের রীতিনীতি- ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করার জন্য সমাজের রীতিনীতির দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন ধরনের পোশাক পরিধান না করাই ভালো। এতে ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য ফুটে উঠে না।
সর্বোপরি পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজসজ্জা, অলংকার ইত্যাদি সামগ্রী উপলক্ষ্য, নিজের সামর্থ্য ও অনুষ্ঠানের ভাবধারার প্রতি লক্ষ রেখে পরিধান করলে আত্মতৃপ্তির পাশাপাশি ব্যক্তিত্বও সবার কাছে প্রশংসিত হয়।

কাজ ১- ব্যক্তিত্বের সাথে পোশাকের ডিজাইনের সম্পর্ক লেখো।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...